Thursday, May 16, 2019

মহালয়া ও আমার কিছু স্মৃতি


আমার কাছে মহালয়া মানে ঝকঝকে নীল আকাশে ছড়িয়ে থাকা টুকরো টুকরো ধবধবে সাদা মেঘ, একরাশ শিউলি,এখানে সেখানে গজিয়ে ওঠা লম্বা লম্বা কাশফুলের ঝাড় আর শিশিরে ভেজা নরম নরম দূর্বা ঘাস। বিকেলে  খেলতে গিয়ে দেখতে পেতাম হঠাৎ করে ঝাঁকে ঝাঁকে চকচকে লাল নীল সবুজ হলুদ বড় বড় ফড়িংয়ের ওড়াউড়ি, দু এক দিন আগেও যাদের অস্তিত্ব চোখে পড়ে নি।
                আসলে আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি ক্যালেন্ডারের পাতা বদলের সাথে সাথে বদলে যেত প্রকৃতি ... আমরা ছোটরা চারপাশের সেই বদল দেখেই বুঝে যেতাম মা আসছেন। আর মহালয়ার দিন এই সত্যি টা প্রতিষ্ঠা পেত।
               দুর্গা ঘরে অনেক দিন আগে থেকে ই শুরু হয়ে যেত মূর্তি গড়ার কাজ আর সেই কাজ কতদূর এগোলো দেখার জন্য প্রতিদিন দু বেলা ধর্ণা দিতাম দুর্গা ঘরে। হ্যাঁ সবাই দুর্গা ঘর ই বলত, মন্দির বা মঞ্চ বলত না। কিন্তু মূর্তি তৈরির কাজ এতো ধীর গতিতে এগোতো যে আমরা অধৈর্য আর হতাশ হতাম। কখনো কোনও রবিবারে হয়তো কুমোর জেঠুর কাছ থেকে একমুঠো মাটি চেয়ে এনে বাবা কে দিয়ে পুতুল বানিয়ে নিতাম। তখন তো আমরা এইরকম ঘরে তৈরি মাটির পুতুল(অনেক টা জগন্নাথ দেবের মতো হাত পা ছাড়া ) নিয়ে খেলতাম। সেই পুতুল দের আবার ঘটাপটা করে বিয়ে ও দেওয়া হতো।
                    যাই হোক! ওদিকে মূর্তি তৈরির কাজ চলত আর এদিকে ঘরে ঘরে শুরু হতো সদ্য বিদায় নেওয়া বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে ওঠা আগাছার জঙ্গল কেটে ঘরদোর সাফাই এর কাজ। তারপর তো হৈ হৈ করে পুরো পাড়া জুড়ে চলত নাড়ু মিঠাই খই মুড়কি বানানো । সে যে কতরকমের নাড়ু! নাড়কেল নাড়ু, চিঁড়ের নাড়ু, সেউই নাড়ু, বোঁদের নাড়ু, মুড়ির মোয়া, বাদাম চাক আরও কত কিছু! পূজোর কদিন যেন সারাক্ষণ সকলে মিষ্টি মুখে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে তো!  পাক দেওয়া গুড়ের মিষ্টি গন্ধ বাতাসে মিশে পূজো পূজো আমেজটাকে আরও শক্তিশালী করে তুলত।
                  এই করতে করতে চলে আসত মহালয়া। আগের দিন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত.... রেডিও টা ঠিক ঠাক আছে তো?রাতে ই রেডি করে রাখা হতো রেডিও, ভোরবেলা  ঠিক সময় উঠে শুধু চালিয়ে দেওয়া। শুরু থেকেই যেন শুনতে পাই, একটু ও বাদ না পড়ে! উঃ! সে যে কি উত্তেজনা!
                    পরদিন ভোরবেলায় প্রত্যেক বাড়ি থেকে ভেসে আসা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গম্ভীর গমগমে গলার স্বর আর আগমনীর পবিত্র সুরের মায়া ছড়িয়ে পড়ত চারিধারে চারিপাশে ।বছরে শুধু এই একটা দিনই খুব উৎসাহ নিয়ে নিজের ইচ্ছেয় ভোরবেলায় উঠতাম আর অবাক হয়ে দেখতাম কেমন করে সুরের আলো ভূবন ফেলে ছেয়ে....

No comments:

Post a Comment